বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

“অবতার” চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আসলেই এক অবতার

টিউন করেছেন : অনুপম শুভ | প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ |

মুক্তির পরপরই সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে অবতার। ছবিটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, হলিউডের ইতিহাসে যে কয়টি ছবি আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে অবতার তার মধ্যে একটি।জেমস্‌ ক্যামেরন সবসময়ই প্রযুক্তির ভক্ত।আর, অবতারের বেলায় তিনি এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন যা তিনি আগে কোন ছবিতে ব্যবহার করেননি।তাই, ক্যামেরন একমাত্র অবতার দিয়েই ঘুরিয়ে দিয়েছেন হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মানের ইতিহাস।


সংক্ষেপে অবতার ছবির কাহিনী এরকম….

“প্যানডোরা” নামক অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপ গ্রহকে অধিকার করার উদ্দেশ্য নিয়ে “অবতার” নামক মিশন শুরু করে পৃথিবীবাসী।প্যানডোরাতে বাস করে দশ ফুট লম্বা নাভি নামের এক জাতি। আর, মানুষ প্যানডোরাতে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। ছবির প্রধান চরিত্র জ্যাক সালিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যুক্ত করা হয় অবতার মিশনে।তাকে পরিণত করা হয় একজন নাভি অবতারে যাতে সে প্যানডোরাতে গিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে ও নাভিদের সাথে মিশতে পারে। কিন্তু প্যানডোরাতে গিয়ে জ্যাক, ন্যাইতিরি নামের এক নাভি মেয়ের প্রেমে পড়ে। শুরু হয় অবতার মিশনের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং নাভিদের প্রতি তার মমত্ববোধের মধ্যে টানাপোড়েন। একসময় নাভিদের পক্ষ নিয়েই অবতার মিশনের সদস্যদের সাথে শুরু হয় জ্যাকের যুদ্ধ, যা শেষ অব্দি ঠিক করে নাভিদের ভাগ্য।

ক্যামেরন অবতার প্রজেক্টের কাজ শুরু করেন ১৯৯৪ সালে। টাইটানিক নির্মাণের পর ১৯৯৯ সালেই তিনি অবতারের কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবতারের জন্য যে প্রযুক্তি তিনি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তখন তা ছিলো না। তাই ২০০৬ সালে তিনি আবার নতুন করে অবতারের স্ক্রিপ্ট লেখেন। শুরু হয় এক নতুন ইতিহাস গড়ার পালা।

দেখা যাক প্রযুক্তি প্রেমিক ক্যামেরন তার অবতার ছবিতে কি কি প্রযুক্তির ছোঁয়া এনেছেন….
সিজিআই-এর সাহায্যে পারফরমেন্স ক্যাপচার….

অবতারের প্রতিটি অংশে Computer Generated Image (CGI) প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহার করেছেন ক্যামেরন। এই প্রযুক্তি তিনি “টারমিনেটর টু” এবং “টোটাল রিকল” ছবিতে ব্যবহার করেন। তবে অবতারের বেলেয় তিনি ব্যবহার করেন একেবারে হাল আমলের প্রযুক্তি “Image-based facial performance capture”। এর জন্য অভিনয়ের সময় নায়ক-নায়িকারা ব্যাবহার করে ক্যামেরা সংযুক্ত বিশেষ ধরণের হেডগিয়ের। যার ফলে তাদের মুখের ভাব-ভঙ্গি সাথে সাথেই বসিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছিল কম্পিউটারে তৈরি করা ভার্চুয়াল চরিত্রদের মুখে। ফলে প্রত্যেকটা চরিত্রকেই অনেক বাস্তবসম্মত ভাবেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
ডিজিটাল অ্যানিমেশন…

পুরো ছবিটির অ্যানিমেশনের কাজ করেছে নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি “ওয়েটা ডিজিটাল”। এই ছবির সম্পূর্ণ অ্যানিমেশনের কাজ শেষ করতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। ছবিতে প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাতা, এমনকি প্রতিটি পাথরকেও আলাদা করে ব্লেন্ড করা হয়েছে। এজন্য ব্লেন্ডিং, লাইটিং ও শেডিং এর আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর, এই সকল অ্যানিমেশন সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন হয়েছে প্রায় ১ পেটাবাইট (১০০০ টেরাবাই) পরিমান হার্ডডিক্স মেমরী।
স্টেরিওস্কোপিক থ্রিডি ফিউশন ক্যামেরা সিস্টেম….

থ্রিডি টেকনোলজির প্রতি ক্যামেরুনের অনুরাগ অনেক আগে থেকেই। আর তারই ধারাবাহিকতায় সর্বকালের সবচেয়ে অগ্রসর ক্যামেরা সিস্টেম ব্যাবহার করেছেন অবতার ছবিতে। এই ক্যামেরা সিস্টেমের নাম “ফিউশন ক্যামেরা সিস্টেম”। লাইভ অ্যাকশন দৃশ্য ও কম্পিউটারে তৈরি করা দৃশ্যের মাঝে যাতে বিন্দুমাত্র গ্যাপ না থাকে সে জন্যই এই সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়।
ভার্চুয়াল ক্যামেরা ও সিমুল ক্যাম…

মোশন ক্যাপচারের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ভার্চুয়াল ক্যামেরা ও সিমুল ক্যাম। আর এই প্রযুক্তিরই ব্যপক ব্যবহার ঘটানো হয়েছে অবতারে। অবতারের ভার্চুয়াল বিশ্বের ছবিকে বাস্তবসম্মত ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ক্যামরন মোশন-ক্যাপচারড রেজাল্টকে রিয়েল টাইম সেট আপে ধারণ করেন। CGI ভিত্তিক চরিত্র ও পরিবেশকে একটিমাত্র ফিউশন আইপিএসে ধরা হয়েছে সিমুল-ক্যামের সাহায্যে। যার ফলে ক্যামেরায় চোখ রেখে সাধারণ লাইভ অ্যাকশনের দৃশের মতই দেখতে পেয়েছেন CGI দৃশ্যগুলোকে।

ছবিতে অভিনয়ের সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মোশন ক্যাপচার পোশাক পড়ে ঘুড়ে বেড়িয়েছেন। এই পোশাকে সংযুক্ত ছিল বিশেষ ধরনের সেন্সর, যাতে করে তাদের শরীরের প্রতিটা মুভমেন্টকে নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এ ছবিতে ব্যাবহার করা হয় বিশেষ হাই ডেফিনেশন থ্রিডি ক্যামেরা। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মুখের মাত্র ২.৫ ইঞ্চি দূরে বসানো ছিলো দু’টি সনি HDC-F950 হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা। যাতে করে তাদের মুখের প্রতিটি পেশীর নড়াচড়াও ধারণ করা সম্ভব হয়।

সতি বলতে পরিচালক হিসেবে জেমস্‌ ক্যামেরনের তুলনা হয় না। টাইটানিক ছবির জন্য অস্কার জেতার পরে তিনি মঞ্চে উঠে বলেছিলেন “I’m the king of the world”…আর অবতারের পর আসলেই স্বীকার করতে হচ্ছে তিনি “কিং অব দ্যা ওয়ার্ল্ড” আর সবই সম্ভব হয়েছে তার অসাধারণ প্রযুক্তিপ্রেমের কারণে। একমাত্র প্রযুক্তিপ্রেমের কারণেই অবতার গড়তে পেরেছে চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন ইতিহাস।

1 টি মন্তব্য: